জেলা প্রতিনিধি, ঝিনাইদহ: কথা বলতে পারেন না। দেখতে রোহিঙ্গার মতো। মুখে পাতলা দাড়ি। বয়স অনুমান ৪৪ বছর। পুলিশ তাকে একটি জিডির সূত্র ধরে রাস্তা থেকে আটক করে। তাকে পাঠানো হয় কারাগারে। কেটে যায় দুই বছর ৯ মাস। কেউ তার খোঁজ নিতে আসে না।
পরিচয়হীন থেকে যায় সে। তাকে নিয়ে সব সময় টেনশনে ছিলেন কারা কর্তৃপক্ষ। অবশেষে গণমাধ্যমের কল্যাণে মিলেছে তার পরিচয়। আজ সোমবার বিকালে ঝিনাইদহ জেলা কারাগার থেকে মুক্তি দেওয়া হয়েছে তাকে।
এ সময় উপস্থিত ছিলেন- জেল সুপার মো. আনোয়ার হোসেন, জেলার মো. রফিকুল ইসলাম, ডেপুটি জেলার মো. সাইফুল ইসলাম, জেলা প্রেস ক্লাব সভাপতি মিজানুর রহমান, সাধারণ সম্পাদক শেখ সেলিম, সাংগঠনিক সম্পাদক আহম্মেদ নাসিম আনসারী, দপ্তর সম্পাদক আব্দুল্লাহ আল মামুনসহ সংশ্লিষ্টরা।
জেলা কারাগারের সুপার মো. আনোয়ার হোসেন বলেন, নীলফামারী জেলার সদর উপজেলার দক্ষিণ চাওড়া গ্রামের যতিন্দ্র নাথ রায় ও শুভারানীর বড় ছেলে মিনাল রায়। জন্ম থেকে বুদ্ধিপ্রতিবন্ধী সে। বয়স বাড়ার সঙ্গে তার শরীরের গঠনের পরিবর্তন হতে থাকে। হয়ে উঠেন তরতাজা যুবক। কথা বলতে পারেন না। মা মারা যান ২০০৭ সালে। বাবা আরেকটি বিয়ে করে অন্যত্র ঘর বেঁধেছেন।
তিনি বলেন, মিনালের ছোটভাই ভবেশ চন্দ্র রায়। সেও প্রতিবন্ধী। মামার কাছে আশ্রয় হয়েছিল তাদের। ৮ বছর আগে হঠাৎ একদিন বাড়ি থেকে হারিয়ে যায় মিনাল। ভবঘুরে হয়ে এখানে সেখানে ঘুরতে থাকে সে। ২০১৯ সালের ১৪ নভেম্বর ঝিনাইদহ সদর উপজেলার নগরবাথান এলাকা থেকে রোহিঙ্গা সন্দেহে পরিচয়হীন হিসেবে মিনালকে আটক করে পুলিশ। এরপর সদর থানার একটি জিডির সূত্র ধরে আদালতে পাঠানো হলে তাকে জেলা কারাগারে পাঠানো হয়।
কারা কর্তৃপক্ষ মানবিক দৃষ্টিভঙ্গির আলোকে বিষয়টি ঝিনাইদহের অতিরিক্ত চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট বৈজয়ন্ত বিশ্বাসের নজরে আনেন। তিনি (বিচারক) নিজ উদ্যোগে লোকটির আসল ঠিকানা খুঁজে বের করার জন্য মরিয়া হয়ে উঠেন। বিষয়টি বিভিন্ন সামাজিক ও গণমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। অবশেষে পরিচয় মিলে যায় তার।
মিনালের মামা শ্রী চিরেন্দ্র নাথ রায়ের হাতে তুলে দেওয়া হয়। মিনালকে পেয়ে খুশি এলাকার মানুষ। তারাও এসেছিলেন ঝিনাইদহ জেলা কারাগারে। তাদের মধ্যে মো. নুরুল ইসলাম ছিলেন। তিনি বলেন, মিনালকে ফিরিয়ে দেওয়ার জন্য আদালত গণমাধ্যম এবং কারা কর্তৃপক্ষের ভূমিকার কথা মনে রাখবেন তারা।
জেলা কারাগারের সুপার আনোয়ার হোসেন জানান, ২০১৯ সালের ১৪ নভেম্বর থেকে কারাগারেই ছিলেন ওই ব্যক্তি। কিছুতেই পরিচয় মিলছিল না তার। অবশেষে পরিচয় মিলেছে তার। সোমবার ২২ আগস্ট মুক্তি দেওয়া হয়েছে তাকে। এতে খুশি হয়েছেন তারা। কারারক্ষীরা অশ্রুসজল চোখে বিদায় জানান মিনালকে। কথা বলতে না পারলেও মাথা নেড়ে হাসি দিয়ে ভালোবাসার জবাব দিয়েছেন মিনাল। শেষ পর্যন্ত মিনাল বাড়ি ফিরে গেল এতেই গণমাধ্যম কর্মীদের আনন্দ ধরে না।
কারা কর্তৃপক্ষের জিপে করে স্থানীয় বাসস্ট্যান্ড পর্যন্ত পৌঁছে দেওয়া হয় তাকে।